বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
এখন স্বাধীন দেশে বসবাস করছি: আগে স্বাধীন ছিলাম না : পীর সাহেব চরমোনাই সতর্ক থাকার আহবান :সেপ্টেম্বরে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ এখনও অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সুযোগ পেলে আঘাত করবে: মীর্জা ফখরুল হোয়াইক্যং ইউনিয়ন উত্তর শাখা ১০ নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত টেকনাফের মাফিয়া ডন বদি গ্রেপ্তার অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার নেপথ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাব সভাপতি তসলিম সিন্ডিকেট যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েলে হামলা করবে না ইরান ১২ দেশের মুদ্রা নিয়ে পালানোর সময় সাবেক ২ মন্ত্রী আটক:১০ দিনের রিমান্ডে বাংলাদেশে সামরিক পদক্ষেপ নিতে মোদির প্রতি আহ্বান কংগ্রেস বিধায়কের
অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার নেপথ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাব সভাপতি তসলিম সিন্ডিকেট

অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার নেপথ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাব সভাপতি তসলিম সিন্ডিকেট

পবিত্র হজ নিয়েও নজিরবিহীন ‘বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট’ গড়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তার ইশারায় প্রতি বছরই অস্বাভাবিকভাবে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়। কারণ তিনি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের এজেন্ট (জিএসএ)। ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সকে থার্ড ক্যারিয়ার হিসেবে চালু করে বাংলাদেশ বিমানের অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী তিনি ফ্লাইনাসে বহন করেছেন। হজযাত্রীদের পকেট কেটে নেওয়া শত শত কোটি টাকা সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরাও নেন। শেখ হাসিনার পতনের পর হজ এজেন্সির মালিকরা তসলিমের স্বেচ্ছাচারিতা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তারা সিন্ডিকেটের কবজা থেকে হাব ও হজযাত্রীদের বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন।

এজেন্সি মালিকরা জানান, ২০২৩ সালে হাব সভাপতি তসলিম ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে এজেন্ট (গ্লোবাল সেলস এজেন্ট-জিএসএ) হন। ওই বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাফে ৫৮ হাজার টাকা বেড়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হয়ে যায়। হঠাৎ এ ভাড়া বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করেন তসলিম। কারণ তিনি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া তার পকেটে ঢোকান। ওই বছর তিনি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে ২০ হাজার যাত্রী ফ্লাইনাসে বহন করেন। চলতি বছরও ফ্লাইনাস ২০ হাজার যাত্রী বহন করেছে। বাড়তি ভাড়া তিনিসহ তার সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে। অথচ সবাই জানে তিনি বিমান ভাড়া কমানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। বাস্তবে তিনিই ভাড়া বৃদ্ধির মূল নায়ক।

হাব সদস্যরা জানান, তসলিম আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদের প্রভাব খাটিয়ে হাবকে জিম্মি করে রেখেছেন। ফলে হাবে অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন নেতৃত্বে আসতে পারছেন না। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম হাজারী তাকে প্রশ্রয় দেন। তাদের ছত্রছায়ায় তসলিম একক আধিপত্য বিস্তার ও হজ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালানোর পর থেকে তসলিমও দেশে নেই। তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে ধারণা করছেন হাব সদস্যরা।

হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, ২০১৯ সালে তসলিম ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সুবিধাবাদী কিছু লাইসেন্সের মালিককে নিয়ে হাব অফিস দখল করে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন তসলিম। তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ও তৎকালীন যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট তাকে দখল করতে সহযোগিতা করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৯ সালে হজের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। সে ভাড়া বেড়ে ২০২২ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়ে যায়। ২০২৩ সালে এক লাফে বিমান ভাড়া বেড়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবু ভাড়া কমানো হয়নি। ভাড়া বাড়ানোর পেছনে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করেন হজ সিন্ডিকেটের নেতা শাহাদাত হোসাইন তসলিম। কারণ তিনি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি এজেন্ট। ভাড়া বাড়িয়ে হজ যাত্রীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন তসলিম। বিমান টিকিটের অতিরিক্ত ভাড়া ভুক্তভোগী হাজিদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছে।

হাব নেতারা জানান, গত ৬ বছরে বিমানের টিকিটের অতিরিক্ত ভাড়া এবং ১ শতাংশ বাড়ি ভাড়া থেকে তসলিম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। হাব অফিসকে যুবলীগ ও ওলামা লীগের আড্ডাখানা বানিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৩-৪টা পর্যন্ত মদ-জুয়া ও আড্ডার আসর বসাত এ সিন্ডিকেট। কোনো হজ লাইসেন্সের মালিক নৈতিক কথা বললে তার লাইসেন্সের মাধ্যমে কোনো কাজ করতে পারতেন না। এমনকি তাদের হাব অফিসে ডেকে নিয়ে মারধর করা হতো। বর্তমানে হাব অফিস তার কমিটি, ওলামা লীগ ও সুবিধাবাদী কিছু হজ লাইসেন্স মালিকের দখলে। সরকার পতনের পর গত ১০ আগস্ট হাব অফিস থেকে শেখ হাসিনা ও তসলিমের ছবি নামাতে গেলে কয়েকজন লাইসেন্স মালিককে আটকে রাখে তসলিমের লোকরা।

২০২৩ সালে ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির, সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক, সালমান এফ রহমান ও স্বপনকে নিয়ে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তসলিম সিন্ডিকেট।

আল নাফি হজ ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নাজিম উদ্দিন  বলেন, এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে হাবকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। বিমানের ভাড়া কমাতে হবে। হজকে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে হবে। বিমানের টিকিট সিন্ডিকেট, হজের আনুষঙ্গিক খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে আনা এবং হাব অফিসকে তসলিম সিন্ডিকেটের কবজা থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিদেশে আত্মগোপনে থাকায় তসলিমের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana