বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

আফ্রিকায় ‘ওমিক্রন’ শনাক্তের পর বাংলাদেশে এসেছেন ২৮ জন

আফ্রিকায় ‘ওমিক্রন’ শনাক্তের পর বাংলাদেশে এসেছেন ২৮ জন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়ার পর আফ্রিকা থেকে ২৮ জন বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে দু’জন নামিবিয়ার নাগরিক। অন্যরা প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ২৪ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় প্রথম ওমিক্রন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। ওই দিন থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিনে তারা দেশে ফেরেন। এ ছাড়া আরও ২১২ প্রবাসী গত এক মাসের বিভিন্ন সময়ে দেশে ফিরেছেন। ওমিক্রন নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের খোঁজা হচ্ছিল।

কিন্তু ইমিগ্রেশনে দেওয়া বাসাবাড়ির ঠিকানায় তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানোর পর আফ্রিকাফেরতদের নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে গতকাল বুধবার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শতাধিক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়িতে লাল পতাকা টানানোর পাশাপাশি সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। অন্যদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অধিকাংশ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের প্রয়োজন, তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।
২৮ জন ফেরেন শেষ চার দিনে :আফ্রিকা থেকে গত ২৪ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে আসেন ২৮ জন। তাদের মধ্যে ২৪ নভেম্বর ১৪ জন, ২৫ নভেম্বর ১০ জন, ২৬ নভেম্বর দু’জন ও ২৭ নভেম্বর দু’জন দেশে এসেছেন। ঢাকার ৯ জন, নোয়াখালীর পাঁচজন; মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদীর দু’জন করে এবং বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মাদারীপুর, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট ও টাঙ্গাইলের একজন করে রয়েছেন। ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করাদের মধ্যে দু’জন নামিবিয়ার নাগরিক। এই ২৮ জনের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরেন ২৫ প্রবাসী ও একজন নামিবিয়া থেকে। আর দু’জন বিদেশি এসেছেন নামিবিয়া থেকে। ২৩ নভেম্বর চারজন, ২২ নভেম্বর চারজন, ২১ নভেম্বর পাঁচজন, ২০ নভেম্বর আটজন, ১৯ নভেম্বর ১৪ জন, ১৮ নভেম্বর ১৯ জন, ১৭ নভেম্বর ২০ জন, ১৬ নভেম্বর ২২ জন, ১৫ নভেম্বর ১৩ জন ও ১৪ নভেম্বর পাঁচজন দেশে ফেরেন। অর্থাৎ ২৪ নভেম্বরের আগের ১০ দিনে দেশে এসেছেন ১১৪ জন। সব মিলিয়ে গত ১৪ দিনে ১৪২ জন দেশে এসেছেন। বাকিরা চলতি নভেম্বরে দেশে এসেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ বতসোয়ানায় ২৪ নভেম্বর করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু ওই দিনই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে এমনটি নয়। এটি হয়তো আরও এক মাস কিংবা তারও আগে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং গত এক মাসে যে ২৪০ জন নাগরিক আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন, তাদের দ্রুততম সময়ে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে তাদের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। আফ্রিকাফেরত ও তাদের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো উচিত। এটি না হলে তাদের মধ্যে কেউ সংক্রমিত থাকলে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাসটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পরই আফ্রিকাফেরতদের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার কিছুটা বিলম্বে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলে ২৪ নভেম্বর থেকে চার দিনে দেশে ফেরা ২৮ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব হতো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, আফ্রিকাফেরত ২৪০ জনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাদের মধ্যে সংক্রমিত কেউ আছেন কিনা, তা জানা প্রয়োজন। কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকলে সে অন্য কারও সংস্পর্শে গেলে ওই ব্যক্তিও সংক্রমিত হবে। সুতরাং কেউ সংক্রমিত হলে কোয়ারেন্টাইন অথবা চিকিৎসার আওতায় আনা প্রয়োজন। আবার যারা সংস্পর্শে গেছেন, তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে নেওয়ার প্রয়োজন। কাউকে জেলে পাঠানোর জন্য নয়, জনসাধারণের মঙ্গলের জন্যই খোঁজা হচ্ছে। আফ্রিকাফেরতদের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে সিভিল এভিয়েশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আফ্রিকাফেরত যাত্রীদের নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা :’ওমিক্রন’ সংক্রমিত আফ্রিকা থেকে ফেরা যাত্রীদের নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, আফ্রিকার পাশাপাশি ওমিক্রন সংক্রমিত অন্যান্য দেশ থেকে আসতে চাইলে যাত্রার আগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরটি-পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সনদ সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবে হবে। অন্য যে কোনো দেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আজই (বুধবার) এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি এ কাজে অন্য যেসব মন্ত্রণালয় যুক্ত, তাদেরও চিঠি দেওয়া হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রয়োজ্য হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো দেশে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলে তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওমিক্রন সংক্রমিত দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আপাতত দেশে না আসার আহ্বান জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana