তদারকি নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের: ঠিকাদারের হাত নাকি অনেক লম্বা! কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
মুহাম্মদ তাহের নঈম:
কক্সবাজার-টেকনাফ শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজে অতি নিম্ম মানের ইট ও পাহাড়ী বালি দ্বারা ঢালাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে এসব অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ৫৮০ কোটি টাকা অর্থায়নে টেকনাফ-কক্সবাজার এ মহা সড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য ৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজটিকে দুটি প্যাকেজে ভাগ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রথম প্যাকেজে ১শত ২২ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে কক্সবাজার লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ দেওয়া হয়েছে টিসিসিএল এন্ড মেসার্স জামিল ইকবাল লিঃ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
২য় প্যাকেজে ১শত ৫৪ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ দেওয়া হয়েছে তাহের ব্রাদার্স লিঃ ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ এবং সালেহ আহমদ বাবুল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সিডিউলের বাইরে ইচ্ছেমত কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। তা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে অনেক স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রকল্পটির কাজের মান নিয়ে জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় প্রশ্ন তুলেছে। তাছাড়া কাজের মান নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। ২য় প্যাকেজের উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে পাহাড়সম। তারা কারো কোন কথার প্রতি তোয়াক্কা করছেনা। নেতা নেত্রীর দোহায় দিয়ে কাজ করছে পুকুরচুরির মাধ্যমে। স্থানিয়রা জানায়, গত মার্চ এপ্রিল মাসে সড়কের প্রশস্থ করণকাজে সড়কের উভয় পাশে খোয়া এবং বালি দিয়ে ভরাট করার নিয়ম থাকলেও হোয়াইক্যং বাজার ও একই ইউনিয়নের উনছিপ্রাং এলাকায় পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা সড়কের পাশে পরিত্যাক্ত মাঠি দিয়ে উভয় পাশের গর্ত ভরাট করা হয়েছে। মাত্র দুই ফুট কাদা মাঠি তুলে আবার পাহাড়ী মাঠি ও পাহাড়ী বালি দ্বারা ভরাট করে উপরে ঢালায় দেয়া হয়। সিসি ঢালায়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের পুরাতন রড। রডের পরিমান ও ছিল কম। অভিযোগ রয়েছে তারা রাতের আঁধারে নিম্ম মানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে দায়সারা ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। হোয়াইক্যং বাজার কমিটির নেতা মোর্শেদ,শফিকুররহমান চৌধুরী, ছৈয়দ আকবর জানায়, কাজের মান খুবই খারাপ। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ও স্থানিয় ঠিকাদার আব্দুলল্লাহ আল জাহেদ লিটন জানায়,এই প্যাকেজের ঠিকাদারের নিম্ম মানের কাজ দেখে হতবাক হয়েছি। সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করবে এ ঠিকাদারের সিডিউলহীন কাজে। স্থানিয় হোয়াইক্যং ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড উনছিপ্রাং এর মেম্বার আব্দুল বাছেত বাচ্ছু জানান,ঠিকাদার নিজস্ব দাফট খাটিয়ে যেন তেন কাজ করছে। তারা নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে কাজে। গত রমজান মাসে সিসি ঢালায়কালে রড দিয়েছে নিয়মের চেয়ে কম। আরো যতেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে কাজের গুনগত মান নিয়ে। গতকাল ১৫ নভেম্বর উনছিপ্রাং ষ্টেশনে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাজার এলাকায় সিসি ঢালায়ের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণ করছে নিম্মমানের ইট ও বালির পরিবর্তে পাহাড়ী মাঠি দিয়ে ড্রেনের গ্রান্ড ফ্লোর ঢালায় দেয়া হচ্ছে।
কাজের অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা শাহীন জানান, শ্রমিকদের ভুলে নিম্ম মানের সামগ্রী আনা হয়েছে। তিনি প্রতিবেদকের সামনেই লেবার দিয়ে দ্রুত মাঠি সরিয়ে ফেলেন। শাহীন আরো জানায় সব জায়গায় সিডিউল মেনে কাজ করা হচ্ছে। নিম্ন মানের ইট কেনো আনা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে, নিম্নমানের ইট আনা হয়নি বরং কাজে ব্যবহৃত ইটের উচ্ছিষ্ট অংশ গুলো সরিয়ে ফেলার জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে কথা বললে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার মুঠোফোনে(০১৭৩০৭৮২৬৮৬) জানান, পাহাড়ী মাঠি দ্বারা ভরাট করার কোন নিয়ম নেই। বালির পরিবর্তে মাঠি দিয়ে ড্রেন ঢালায়ের ব্যাপারে আমি খুজ নেব। এধরনের কাজের যথাযত প্রমাণ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে তা ভেঙ্গে আবার নতুন করে কাজ করে দেবো বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী ।
Leave a Reply