শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন
চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দারিদ্র্য খাত সুরক্ষাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ১৩ দফা সুপারিশ এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। পাশাপাশি দ্রুত প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আস্থাহীনতাসহ পাঁচটি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু ও বিলম্বে বাস্তবায়নের কারণ শনাক্ত, রফতানি খাতে নজর ও শ্রমিকদের সহায়তা দেয়া।
সূত্র আরও জানায়, এসব বাধা ও সুপারিশগুলো সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পাঠাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় অর্থনীতিকে আরও সুরক্ষা দিতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। এরপর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।
প্যাকেজ সংক্রান্ত ওই বৈঠকে অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, প্রণোদনা সংক্রান্ত এ বৈঠকে যেসব সুপারিশ আসছে তা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে। এরপর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সুপারিশের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনায় দু’ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম স্বাস্থ্য খাতের ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি। স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি প্রতিদিন প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব বের করতে আরও সময় লাগবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর ৪ শতাংশ ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা নিয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে, ২৯ শতাংশ হতে পারেনি। এজন্য প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে এটি কার্যকর হবে।
সূত্র মতে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার ঘোষণা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে অক্টোবর পর্যন্ত এসব প্যাকেজ থেকে ৬৬ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা বিতরণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে প্যাকেজের ঋণ বিতরণের সমস্যা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতেই সব মহলকে নিয়ে বৈঠক করেছে অর্থ বিভাগ। ওই বৈঠকে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে যেসব বাধা শনাক্ত করা হয় এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আস্থাহীনতা। প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে ঝুঁকি মনে করছে ব্যাংকগুলো। যে কারণে ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড় করা হচ্ছে না। এছাড়া রয়েছে ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও অস্বচ্ছতা। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও ছোট গ্রাহকদের স্বার্থ দেখছে না। আবার অনেক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বা সম্পৃক্ত না থাকায় তারা কোনো প্যাকেজ সুবিধা পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ব্যাংক ঠিকমতো প্যাকেজের অর্থ বিতরণ করছে না। আমি মনে করি আইনগতভাবে ব্যাংকগুলো প্যাকেজের ঋণ বিতরণে বাধ্য। যে মানছে তার সঙ্গে অর্থ বিভাগের আলাদা বসা দরকার। কেন মানছে সেটি জানতে হবে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে- প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি স্বাধীন (তৃতীয় পক্ষ দিয়ে) মূল্যায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে (এসএমই) আরও সহায়তা দেয়া, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্যাকেজের সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। এছাড়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণের অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত, এসএমই খাতে প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে এসএমই খাতে নিয়ে আসা। একই সঙ্গে নতুন গরিব হওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে দেশব্যাপী ওএমএস কর্মসূচি চালু. কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতে ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা ও প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। সেখানে আরও বলা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দ্রুত ছাড় করতে হবে।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন বলেন, প্যাকেজ বাস্তবায়নে দুটি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রথমত, রফতানি খাতের শ্রমিকদের এবং দ্বিতীয় হচ্ছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন তার সুপারিশে বলেছেন, অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ সরবরাহ আরও বাড়াতে হবে। দুর্বল অবকাঠামো চিহ্নিত করে সংস্কার করতে হবে। এ সময় সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিস. রেন্সজে তেরিংক বলেছেন, করোনাভাইরসা শ্রমবাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। দারিদ্র্যও বাড়ছে। এক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।
Leave a Reply