শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
গভীর ঘুমে নেতৃত্বহীন আমেরিকা !

গভীর ঘুমে নেতৃত্বহীন আমেরিকা !

বর্তমান হোয়াইট হাউজ হচ্ছে অনেকটা উদাসীন ল্যাংড়া হাঁসের মতো। যার কোনো প্রকৃত সঙ্গী থাকেন না। এই হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব এখনও উদাসীন রিপাবলিকান পার্টির হাতে। কিন্তু সঙ্কটময় মুহূর্তে কেন থমকে গেল কলম্বাসের আমেরিকা? মূলত ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণা যখন জোরালোভাবে শুরু হয়, তখনই থমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের চাকা। বিশেষ করে করোনার থাবার শুরু থেকেই প্রভাব পড়ে মার্কিন অর্থনীতিতে। ফলে বেকার খাতায় নাম লিখিয়ে পথে বসে দেশটিতে কর্মরত বহু অভিবাসী এবং মার্কিনিরা।

আধুনিক আমেরিকার এমন ভঙ্ঘুর পরিস্থিতির মধ্যে উঁকি দিচ্ছে ভয়াবহ শীত। করোনা মহামারিতে আসন্ন অন্ধকার মাসগুলিতে কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তার কোনো দূরদর্শী পরিকল্পনার গন্ধ নেই। ক্ষমতার শেষার্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা করোনা প্রতিষেধক টিকা আনার যে আওয়াজ দিয়েছিল, তা ওই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। ফলে করোনার ঊর্ধ্বগতিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ধুঁকছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা বুঝে পাননি। সে হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারিতে ট্রাম্পের কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে পাবেন বাইডেন।

তবে নির্বাচনে জিতেই বেশ দ্রুত নিজের প্রশাসন গুছিয়ে নিচ্ছেন অভিজ্ঞ বাইডেন। কোভিড উপদেষ্টাসহ অভিজ্ঞ দল গঠনে দ্রুত এগিয়ে চলছেন তিনি। ক’দিনের মধ্যেই মার্কিন অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারকদের নাম ঘোষণা করতে পারেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু বিপদের বিষয় হল- ২০ জানুয়ারি আসার আগেই স্বাস্থ্য সঙ্কট এবং অর্থনৈতিক সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, যদি শীত জেঁকে বসার আগেই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতেও আমেরিকার সুরক্ষায় বতর্মান মার্কিন প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বরং নির্বাচনে হেরে মামলা মোকাদ্দমা নিয়েই ব্যস্ত রিপাবলিকান শিবির।

সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন বাইডেন: 

থ্যাঙ্কসগিভিং-এ সাপ্তাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলার পথ খুঁজছেন। বাইডেনের প্রথম কাজ হলো কোভিড-১৯ শক্ত হাতে মোকাবিলা করা। আর তা সফলভাবে পরিচালনা করতে হলে হোয়াইট হাউজের মধ্যে সমন্বয় আনা খুবই দরকার। তারপর সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন বিতরণ করা। যেহেতু মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সামনের শীতকে অন্ধকার উল্লেখ করে বার বার সতর্কবাতা দিয়ে যাচ্ছেন।

শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের গভীর সতর্কবার্তা: 

মার্কিন সহকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রেট গিরোইর বলেন, ‘রাজ্যগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যাবহারের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। স্টেট ইউনিয়ন টিকা বিতরণে বেশ আত্মবিশ্বাসী। সামনের সপ্তাহে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের বৈঠকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে বছর শেষ হওয়ার আগেই ইনজেকশন দেওয়া শুরু করা যেতে পারে। বেশিভাগ আমেরিকান আগামী বসন্তের মধ্যে ভ্যাকসিন দেখতে পাবেন। এমনকি বসন্তের শেষ দিকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও এগিয়ে যাবে।’

ব্রাউন বিশ্ববিদাল্যায়ের জরুরি চিকিৎসক মেগান র‌্যানি। যিনি বর্তমানে কোডিডে আক্রান্ত আমেরিকান রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোববার (২৯ নভেম্বর) তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দূরবস্থার কারণে জাতীয় হাসপাতালগুলোতে বিপর্যয় নেমেছে। করোনা শুরুর পর থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের কথা বলে আসছি। এমনকি হাসপাতাল বর্ধিতের বিষয়টিও জানিয়েছে। যেগুলো এখনও তীব্র সঙ্কট রয়েছে। এত সঙ্কটের মধ্যেও কোভিড-১৯ রোগীদের ঢল আরও বেড়েছে। যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবগত থাকলেও কোনো কর্ণপাত করছেন না। ফলে চারদিকটা আরও বেসামাল। মার্কিন শীর্ষ রোগ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থোনিও ফাউসি সতর্ক দিয়ে বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত বিপর্যয় দেখা যাবে করোনার। যদিও সেই সময়ে আমরা ইতিমধ্যে প্রবেশ করেছি।’

সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক এবং সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল জেরোমি অ্যাডম। ‘আমি মাকির্নিদের জন্য কঠোর হতে চাই, কারণ আগামী কয়েক সপ্তাহগুলি খুবই খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’ হোয়াইট হাউজে বসার লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিয়মিত তার দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার তার প্রশাসনে সিএনএনের সাবেক রাজনৈতিক বক্তা নারীকেও নিয়োগ দেয়ার কাজটি সেরেছেন। যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জো বাইডেন যখন নতুন প্রশাসন গোছানো এবং সামনের দিনগুলোতে কীভাবে কাজ করবেন সেই পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত, তখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যাম্প ডেভিড-এ গল্ফ খেলে সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে বাইডেনের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই অনেকটা লোক চক্ষুর আড়ালে। তার অভিযোগ, ডেমোক্র্যাট দল ‘নির্বাচন চুরি’ করায় হেরে গেছেন তিনি। যদিও কোনো অভিযোগেরই এখন পর্যন্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি ট্রাম্প। একে ‘মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভুয়া নির্বাচন’ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির অ্যাখা দেন তিনি।
লেখক:  স্টিফেন কলিনসন, হোয়াইট হাউজ রিপোর্টার। স্বত্ব: সিএনএন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana