শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন
টেকনাফের কাঞ্জরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী কে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া শিক্ষক কে পুনঃনিয়োগ দিতে তোড়জোড়!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টেকনাফ উপজেরার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীকে যৌন হয়রানি পরবর্তী উক্ত ছাত্রী কে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে বিদ্যালয়ের অভিভাবক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি গত ২৭ সেপ্টেম্বর (২৭.০৯.২২)টেকনাফ উপজেলার কাঞ্জরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক(ইংরেজি) সৈয়দ ছেকাব উদ্দিন একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী (নাম গোপন রাখা হল) কে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায়। তাদের উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ক্লাস চলাকালে নানা প্রেমালাপ চলতো উভয়ের মধ্যে। এক পর্যায়ে বিষয় টি ছাত্রীর অভিভাবক রা ও জানতে পারে।
ছাত্রীর জনৈক অভিভাবক বিদ্যালয়ে গিয়ে তারকৃত অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে উক্ত শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কে সতর্ক করেন। এর পর উক্ত যৌন লোভী শিক্ষক
ছাত্রী কে নিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক বরাবর তার ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে ১৯/০৯/২০২২ স্বেচ্ছায় সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে ইস্তেফা নামা বা পদত্যাগপত্র জমা দেন। ছেকাব উদ্দিনের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিলে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসাবে যোগদান করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ অনৈতিক কর্মকান্ডের পর ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য মারমুখী হয়ে উঠে এলাকাবাসী।
উক্ত বিষয় নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরি বৈঠক আহবান করে।
এর পর ২৫/১০/২০২২ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলহাজ্ব বেলাল উদ্দিন (সভাপতি)আলহাজ্ব আব্দুররহমান,হাজ্বী আব্দুসসালাম, আব্দুল জলিল, হামিদ হোছাইন,হাফেজ মোঃ ইউনুস, জাফর আলম,রুবি আক্তার,আরেফা খানম,শফিকুল আলম,মনি রায়,রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাক্ষর করেন । বৈঠকে উপস্থিত সভ্যগন ওই শিক্ষকের ঘটনার ধিক্কার ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
রেজুলেশন আকারে তার পদত্যাগপত্র গ্রহন ও তার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ঘোষণা করেন। রেজুলেশন এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন,এমপিও শীট বা ইনডেক্স থেকে তার নাম কর্তনের জন্য প্রধান শিক্ষক কে দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্রী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার প্রায় সাত মাস অতিক্রম করলে ও রহসজনক কারণে উক্ত বিষয় ধামাচাপা পড়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি মোটাদাগের টাকায় বশিভূত হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে উক্ত রেজুলেশন হিমাগারে রাখে। সেই নাটক এখানে শেষ নয়,উক্ত লম্পট শিক্ষক কে বিদ্যালয়ে পুনরায় নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি,সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলছে অবৈধ আবদার!
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের উক্ত সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছিল। ক্লাস চলাকালীন ছাত্রীদেরর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানের নানা অশ্লীল বর্ণনা দিতো। বিষয়টি মৌখিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ও জানায়। যদিওবা বিষয়টি প্রদান শিক্ষক অস্বীকার করছেন।
বর্তমানে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জোর চেষ্টা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও উক্ত বিদ্যালয়ে ১৮/২০ জন ছাত্রী প্রেমে পড়ে অন্যজনের হাতধরে পালিয়ে গেছে।
এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, আমরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে পাঠিয়ে নিরাপদ মনে করি। কিন্তু শিক্ষক ছেকাব উদ্দিনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে হতবাক ও আমরা লজ্জিত। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার চাই।
কমিটির এক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তিনি জানান,নৈতিক অবক্ষয়ে জর্জরিত একজন শিক্ষক, নিজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে তার কাছে পৌছে দিতে অত্র স্কুলের ছাত্রদের কে ব্যবহার করে নিজের প্রেমের স্বার্থকতা পূরণ করতে কোন দ্বিধা করেনি,সেই শিক্ষক কে আবারো স্কুল কর্তৃপক্ষ কিভাবে গ্রহন করবে?আর ছাত্র ছাত্রী তার কাছে কি শিখবে? তিনি বলেন,
শূন্য গোয়াল অনেক ভালো দুষ্টু গরুর চেয়ে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়,এই লম্পট শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা তাকে আর শিক্ষক হিসাবে মেনে নিবনা। প্রয়োজনে আমরা মানববন্ধন করবো।
অভিযুক্ত উক্ত শিক্ষকের ০১৯০৭৯৯৩৬৮৩ মুঠোফোনে এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নিতে ফোন করা হলে তার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কাঞ্জরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি সঠিক। মোটাদাগে লেনদের বিষয় সত্য নয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অবহিত করেছি। তা নিয়ে এক উপর মহলের চাপ আছে আমার উপর। কমিটির সভাপতি ও এ বিষয়ে অবগত আছেন।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ বেলাল উদ্দিন জানান, উক্ত শিক্ষকের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রধান শিক্ষক কে রেজুলেশন আকারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার অবহেলার কারণে বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে।
উপজেলার দায়িত্বরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান,বিষয়টি এতদিন আমাকে জানানো হয়নি। পরে শুনেছি। এখন তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply