শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন সারা দেশের আরও ৯৫৬ মুক্তিযোদ্ধা। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও এতদিন তাদের নামে কোনো গেজেট জারি বা সনদ ইস্যু করা হয়নি।
ফলে তাদের কপালে জোটেনি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও। উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের পর এবার তাদের গেজেটভুক্ত করতে সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া শুরু করবেন এই মুক্তিযোদ্ধারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
উল্লেখিত বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘জামুকার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপরই তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকা সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে এক লাখ ২৩ হাজার ১৫৪ জন এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০ জন আবেদন করেছিলেন জামুকায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা/জেলা/মহানগর কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হয়।
৪৭০টি কমিটির মধ্যে ৩৮৫টি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেও ৮৫টি কমিটি কাজ করতে পারেনি সদস্যদের দ্বন্দ্ব এবং কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায়। প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে উপজেলা, জেলা কিংবা মহানগর কমিটি তিন ধরনের খসড়া তালিকা তৈরি করে। ‘ক’ তালিকা হচ্ছে যাচাই-বাছাই কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত তালিকা। ‘খ’ হচ্ছে কমিটির দ্বিধাবিভক্ত মতের ভিত্তিতে করা তালিকা।
‘গ’ হচ্ছে কমিটির নামঞ্জুর করা তালিকা। যাচাই-বাছাই কমিটিগুলোর ‘ক’ তালিকায় মোট ২৬ হাজার ৯৪২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। বাকি আবেদনগুলো নামঞ্জুর করা হয়। সেখান থেকে ৩৫ হাজার ৫৯৯ ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে জামুকায় আপিল আবেদন করেন। আপিলকৃত আবেদন অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে প্রতি বিভাগে একটি করে মোট ৮টি কমিটি গঠন করা হয়।
এসব কমিটির মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের ৪ কমিটির প্রতিবেদনে মোট ৩৫৭ জনের বিষয়ে গেজেট জারির সুপারিশ করে ওইসব কমিটি। অন্যদিকে জামুকা কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন উপকমিটির প্রতিবেদনে আরও ৫৯৯ জনকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট জারি করার সুপারিশ করা হয়।
গত ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার ৭০তম সভায় উপজেলা ও মহানগর কমিটির সুপারিশকৃত ‘ক’ তালিকা প্রতিবেদন পুনঃযাচাই করে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের ৩ উপজেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ উপজেলা, খুলনা বিভাগের ১৬ উপজেলা এবং রংপুর বিভাগের ২৩ উপজেলার মোট এক হাজার ১০০ জনের সুপারিশ পাঠানো হয়।
জামুকার পুনঃযাচাই শেষে মাত্র ৩৫৭ জনের গেজেট জারির সুপারিশ বহাল রাখে কমিটি। অন্যদিকে জামুকার বিভিন্ন সময়ে গঠিত উপকমিটির বৈঠকে এক হাজার ১৯৭ জনের আবেদন যাচাই করে মোট ৫৯৯ জনের বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তাদের বিষয়েও গেজেট জারির সুপারিশ করেছে জামুকা।
‘ক’ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের জামুকা সদস্য কর্তৃক যাচাই শেষে ঢাকা এলাকার টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার ৩ উপজেলা থেকে ৯৭ জনের বিষয়ে সুপারিশ করে উপজেলা যাচাই কমিটি। পুনঃযাচাই শেষে মাত্র ২৩ জনের গেজেট জারি করার সুপারিশ করে জামুকা।
ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার ৪ উপজেলার ১৩১ জনের আবেদন যাচাই শেষে ৩৬ জন, খুলনা বিভাগের ১৬ উপজেলার ৩৪৯ জনের মধ্যে ১৯ জন এবং রংপুর বিভাগের ২৩ উপজেলার ৫২৩ জনের মধ্যে ২৭৯ জনের গেজেট জারির সুপারিশ করে জামুকার সংশ্লিষ্ট কমিটি। এছাড়া জামুকার বিভিন্ন সময়ে গঠিত উপকমিটির বৈঠকে এক হাজার ১৯৭ জনের আবেদন যাচাই করে মোট ৫৯৯ জনের বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। এর মধ্যে মুজিবনগর উপকমিটি ১৭৮ জনের আবেদন যাচাই করে ৫৬ জনের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতাল সংক্রান্ত উপকমিটি ৫৪ জনের যাচাই শেষে ১৭ জন, শব্দসৈনিক উপকমিটি ২২ জনের মধ্যে ১৯ জন, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) উপকমিটি ৮৬ জনের মধ্যে ৬১ জন, শহীদ উপকমিটি ৬৩৬ জনের মধ্যে ৩২৭ জন ও যুদ্ধাহত উপকমিটি ৯৮ জনের আবেদন যাচাই শেষে ৪০ জনের বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করেছে কমিটি। এছাড়া বিমানবাহিনীর বেসামরিক গেজেটভুক্তি সংক্রান্ত উপকমিটি ৪৭ জনের মধ্যে ৩৬ জন এবং গেজেটভুক্তি সংক্রান্ত বিশেষ উপকমিটি ৭৬ জনের মধ্যে ৪৩ জনের বিষয়ে গেজেট জারি করার সুপারিশ করেছে জামুকার সংশ্লিষ্ট কমিটি।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সরকার বদলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার তালিকার পরিবর্তন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। তবে তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন।
তাদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয়া হয়। এর বাইরে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীরউত্তমদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ২০ হাজার টাকা, বীরপ্রতীকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী দেয়া হচ্ছে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা এবং শহীদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply