বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

তুমুল বিতর্কের পর মামুনুল ভাগ্য তদন্ত কমিটিতে

তুমুল বিতর্কের পর মামুনুল ভাগ্য তদন্ত কমিটিতে

তুমুল বিতর্কের পর হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের ভাগ্য ঝুলেছে তদন্ত কমিটিতে। গতকাল হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকজুড়েই হেফাজতের সিনিয়র নেতারা সরব ছিলেন মামুনুলের সোনারগাঁয়ে নারীসহ অবরুদ্ধ ও বিতর্কিত নানান কর্মকান্ড নিয়ে। এ সময় তার বহিষ্কারের জন্য দাবিও জানান। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় থমকে যায় সেই উদ্যোগ। পরে এক প্রকার বাধ্য হয়ে মামুনুলের কর্মকান্ড তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ২৯ মের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে বৈঠকের পরে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রিসোর্ট কান্ডটি মামুনুল হকের ব্যক্তিগত বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘বৈঠকে মামুনুল হক কিংবা কারও বহিষ্কার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। রিসোর্টের ঘটনাটি মামুনুল হকের ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না হেফাজতে ইসলাম। যা বলার মামুনুল হকই বলেছেন।’

বৈঠকে উপস্থিত সংগঠনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জরুরি বৈঠকের পুরোটাই জুড়ে ছিল মামুনুল কান্ড নিয়ে আলোচনা। মামুনুলের এমন আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বহিষ্কার দাবি করেছেন উপস্থিত অনেক সিনিয়র নেতা। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বাধার কারণে ভেস্তে যায় মামুনুলের বহিষ্কার উদ্যোগ।’ জানা যায়, যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের ‘সোনারগাঁ কান্ডের’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় জরুরি বৈঠকে বসেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির ২১ নেতা উপস্থিত ছিলেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতে মামুনুল হক কান্ডের কথা তোলেন হেফাজতে ইসলামের এক নায়েবে আমির। তিনি হেফাজতে ইসলামকে বিতর্কের হাত থেকে রক্ষা করতে মামুনুল হককে বহিষ্কারের পক্ষে মতামত দেন। এরপর একে একে কয়েকজন নেতা মামুনুল হককে বহিষ্কারের জন্য বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এ ঘটনাকে মানুনুল হকের ব্যক্তিগত বিষয় আখ্যা দিয়ে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। এ সময় মামুনুল হকের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারী নেতারা তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে এক প্রকার বাধ্য হয়ে মামুনুল কান্ড তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির হাফেজ তাজুল ইসলামকে। তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি এবং ড. নুরুল আবছার আজহারী। কমিটিকে আগামী ২৯ মে হাটহাজারীতে অনুষ্ঠেয় ওলামা মাখায়েখ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হেফাজতের দাবি ও কর্মসূচি : জরুরি বৈঠকের পর ব্রিফিং করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তিদান। মাদরাসাসমূহ লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা। রমজানে মসজিদকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধ। এ ছাড়া আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় জাতীয় ওলামা শাখায়েখ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল আওয়াল, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শোআইব জমীরী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, ড. নূরুল আবসার আজহারী প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana