সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকে হামলার আশঙ্কায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে মার্কিন গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। বাইডেনের শপথের আর মাত্র তিন দিন বাকি। তার আগেই রাজধানী ওয়াশিংটনজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন জোরদার করা হয়েছে যে, মার্কিন ইতিহাসে যা একেবারেই নজিরবিহীন। রাজধানীকে তাই ডাকা হচ্ছে ‘ফোরট্রেস ওয়াশিংটন’ বলে।
কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশের ৮ ফুট উঁচু প্রাচীরে বসানো হয় ক্ষুরধার তারকাঁটা। ট্রাম্পপন্থি উগ্র হামলাকারীরা আগের দিনের মতো যেন এবারও দেওয়াল বেয়ে উঠতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। তারকাঁটার পেছনেই পাহারায় রয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা।
এদিন সন্ধ্যায় ক্যাপিটল হিলে হঠাৎ পরিদর্শনে আসেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এ সময় তিনি ঘুরে ঘুরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন ও পাহারায় থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
পেন্স বলেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে আপনাদের সেবা করতে পারা অতি সম্মানের। দেশ ও নাগরিকদের সেবায় কাজ করছেন আপনারা। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এর দুদিন আগেই পরিদর্শন করেন হাউজ স্পিকার ও ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি। নিরাপত্তা বিষয়ে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (৬ জানুয়ারি, বুধবার) পার্লামেন্টের এক যৌথ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিজয় সত্যায়ন করে মার্কিন কংগ্রেস। কিন্তু সত্যায়নে বাধা দিতে অধিবেশনকালেই পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সশস্ত্র হামলা চালায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা। বাইডেনের সত্যায়ন অনুষ্ঠান সামনে রেখে কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার সমর্থক।
এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই পার্লামেন্ট চত্বরে ঢুকে পড়ে তারা। জলকামান, টিয়ারগ্যাস আর পেপার স্প্রে করেও হামলাকারীদের ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। এ সময় কার্যত রণক্ষেত্রে রূপ নেয় পুরো ক্যাপিটল চত্বর। এরপর সিঁড়ি দিয়ে, দেওয়াল বেয়ে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ে তারা। ভাঙচুর ও তাণ্ডব পুরো ভবনে। অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না নিরাপত্তা বাহিনীর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পার্লামেন্টে হামলার এ নজিরবিহীন ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় মার্কিন রাজনীতিতে। একে ‘গণতন্ত্রের ওপর হামলা’ অভিহিত করে নিন্দা জানান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ ঘটনায় উসকানি দেওয়ায় ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছে। হামলা ও তাণ্ডবে অংশ নেওয়ায় হামলাকারীদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
এরইমধ্যে খবর আসছে, আগামী ২০ জানুয়ারি বুধবার বাইডেনের শপথানুষ্ঠানে ফের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প সমর্থকরা। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পুরো ওয়াশিংটন ও পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ডাকা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের। গত কয়েকদিনে ক্যাপিটলে মোতায়েন করা হয়েছে অন্তত ২০ হাজার সেনা। যে কোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গুলি চালানোর। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র টহল দিচ্ছে এসব সেনা।
Leave a Reply