শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বিয়ের মাধ্যমে সমাজে স্থিতিশীলতা রক্ষা পায়: আনে ঈমানের পূর্ণতা

বিয়ের মাধ্যমে সমাজে স্থিতিশীলতা রক্ষা পায়: আনে ঈমানের পূর্ণতা

নাঈমুল হাসান তানযীম :                                    বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধনের নাম। দুটি অপরিচিত মানবসত্ত্বার পরিচয় ঘটে এ বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ের মাধ্যমে সমাজে স্থিতিশীলতা রক্ষা পায়।

অবৈধ সম্পর্ক, অবৈধ ভালোবাসা থেকে বৈধ এবং প্রশান্তিময় এক জীবন লাভ করা যায়। বিয়ের মাধ্যমে অনেক গুনাহ এবং গর্হিত কাজ হতে বিরত থাকা যায়।

হাদিসে নববিতে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘হে যুবক সকল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ, বিয়ে করলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা যায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করা যায়। আর যে ব্যক্তি বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না সে যেন রোজা রাখতে থাকে। কারণ রোজা তার খাহেশকে কমিয়ে দেবে (বুখারি, মুসলিম)।

বিয়ে হলো অর্ধেক দ্বীন। বিয়ে করার মাধ্যমে অর্ধেক ইমান পূর্ণ হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যেহেতু বিয়ে করার দ্বারা অনেক পাপ কাজ কমে যায়, অবৈধ সম্পর্ক থেকে বৈধ ও হালাল ভালোবাসার আদান-প্রদান করা যায় কেমন যেন তা অনেক গুনাহ থেকে বিরতকারী হয়ে গেল। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল সে তার অর্ধেক ইমান (দ্বীন) পূর্ণ করে ফেলল। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)।

বিয়ে আবার নবি-রাসূলগণের সুন্নতও। সুতরাং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিয়ে করা থেকে অনীহা প্রদর্শন করল, কেমন যেন সে রাসূলের সুন্নতকে এড়িয়ে গেল।

হজরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে যত নবি-রাসূল এসেছেন সবাই বিয়ে করেছেন। আল্লাহতায়ালা কুরআনে কারিমে বলেছেন, ‘আপনার পূর্বে আমি তো অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী, সন্তানসন্ততি দিয়েছিলাম।’ (সূরা ১৩ রা’দ ৩৮ আয়াতাংশ)।

আর নবি ও রাসূলগণ যা করেন তা মানুষের জন্য সর্বোত্তম অনুসরণীয় কাজ। বিয়ে জিনিসটা যত তাড়াতাড়ি সংঘটিত হবে তত বেশি উপকার। বিশেষ করে, সন্তানসন্ততি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বেশি দেরি করা মোটেই উচিত নয়। কারণ, একে তো এটা অনেক কল্যাণময় ও ফলপ্রসূ। দ্বিতীয়ত যুগের মন্দতা। আজকের যুগের অধঃপতনের ব্যাপারটা কারও অজানা নয়। পাপ এবং মন্দ কাজ করার বহু উপকরণ বিদ্যমান চারপাশে। চোখ সরালেই সামনে ভেসে ওঠে নানা অসৎ কার্যাবলি। যেনবা পাপের দরিয়া। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাপ আর পাপ। এহেন মুহূর্তে বিয়ে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন। কারণ, এর দ্বারা সমাজের অনেক বড় বড় পাপ এবং গর্হিত কাজ কমে যায়।

অনেকে আবার চিন্তা করে, বিয়ে করলে নিজে কী খাবে। স্ত্রীকে কী খাওয়াবে? এসব চিন্তাভাবনা নিতান্তই অহেতুক। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেষ্টা চালিয়ে গেলে অবশ্যই কোনো না কোনো বিহিত হবেই। তা নিয়ে আমাদের টেনশন করা মোটেই উচিত নয়। তা ছাড়া আল্লাহতায়ালা তো বলেই দিয়েছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের সৎকর্মশীল দাস-দাসীদেরও তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা : নুর, আয়াত : ৩২)।

উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু বকর (রা.) তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘তোমরা বিয়ে করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করো। তিনি তোমাদের দেওয়া অঙ্গীকারও পালন করবেন।’ (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ৮/২৫৮২)। তা ছাড়া আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের মাধ্যমে প্রাচুর্যের অনুসন্ধান করো।’ (জামিউত তাবিল : ১৭/২৭৫)।

সুতরাং ওই আলোচনা দ্বারা এটাই স্পষ্ট হলো, বর্তমান যুগে বিয়ে করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অতএব, প্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকদের দ্রুত তা সম্পাদন করা উচিত। নয়তো কোনো পাপ সংঘটিত হলে এর দায়ভার অভিভাবকদের ওপরই বর্তাবে এ থেকে শিথিলতা গ্রহণ করার কারণে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana