বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ তাহের নঈম:: একটানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমির চিংড়িঘের ও চাষাবাদ নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
চিংড়ি ঘের মালিকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও দ্বিগুন হতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন।
জানা যায় , উপজেলার সীমান্ত জনপদ টেকনাফ সীমান্তের কোল ঘেঁষে নির্মাণাধীন বেরিবাঁধ চলমান থাকলেও একদিকে টানা ভারী বর্ষণ অপরদিকে জোয়ার ও ঢলের পানিতে প্রায় চিংড়ি ঘের লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় পুরাতন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এতে নষ্ট হয়ে যায় চিংড়ি ঘেরের অভ্যন্তরে থাকা চাষাবাদ যোগ্য ফসলি জমি। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন, টেকনাফ সদর, হ্নীলা ইউনিয়ন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন সহ সীমান্তের অনেক চিংড়িঘের মালিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার চিংড়ি ঘের প্রবণ এলাকা হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড সহ পুরো ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় টেকনাফ এর বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ায়ের পানিতে প্লাবিত হয়ে কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি ঘেরসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হাজার হাজার ঘর বাড়ি, চিংড়ি ঘের, ফসলী জমি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ হাজার-হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার ।
বন্যা কবলিত লোকজন স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টার ও বিভিন্ন উঁচু স্থান সহ বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। নাফ নদীর উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন অংশে পুরাতন বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন, গ্রামের বসতভিটা প্লাবনের পাশাপাশি কৃষি জমি ও অনেক চিংড়ি ঘের নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গেল কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে টেকনাফ সদরের জালিয়াপাড়া হ্নীলা ইউনিয়নের আলী খালি, রঙ্গিখালী, মৌলভীবাজার, ইউনিয়নের নয়াবাজার কাঞ্চরপাড়া, মিনা বাজার, উনছিপ্রাং, লম্বা বিল, তেচ্ছিব্রীজ, উলুবনিয়া সহ আশ পাশ এলাকা জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রূপ নিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যাপক ভাঙ্গনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে জোয়ারের পানিতে হুমকির মুখে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
জানা গেছে, এখনো হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা পানির নিচে রয়েছে। বৃষ্টি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সীমান্তের হাজার হাজার মানুষ। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের সদস্যরা এখন সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়। জোয়ারের প্রভাবে কোন কোন এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে চিংড়ি ঘের সমূহ। পাহাড়ি ঢল ভারী বর্ষণে শতাধিক পুকুরের মাছ নষ্ট হয়েছে। হোয়াইক্যং চিংড়ি উৎপাদন কারী ও সরবরাহকারী সমিতি (রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ২১৩৮) এর সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ ইউনুস জানান, আমাদের সমিতির সদস্য ভুক্ত অনেক চিংড়ি ঘের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পথের মধ্যে বসেছে। আমাদের চিংড়ি ঘের সমূহের প্রায় ১কোটি ৪৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রায় ৪৮০ একরের অসংখ্য চিংড়িঘের এখনো পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে ১নং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের চিংড়িঘের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
চিংড়ি ঘেরের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যমতে, উপজেলায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার চিংড়ি পোনা ও ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হয়তো ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।#
Leave a Reply