সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার, ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর হস্তান্তর শনিবার: টেকনাফে ২৮ টি গৃহহীন পরিবার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার, ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর হস্তান্তর শনিবার: টেকনাফে ২৮ টি গৃহহীন পরিবার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

টানা এক যুগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বেই গ্রামীণ অবকাঠামো, খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তিচুক্তি, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। দেশে চলমান এমন উন্নয়নের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন- মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে।

এদিকে টেকনাফের সংবাদকর্মী

রহমত উল্লাহ, জানায়,

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় মৌলভী বাজার ২ নং ওয়ার্ডের গ্রামগুলো থেকে হত দরিদ্র, গরীব-অসহায়, খেটে-খাওয়া ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রধান মন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর দিয়ে ২৮ টি গৃহহীন পরিবার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরিজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার থেকে পূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি সরকারি উদ্দেগে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মুজিব শতবর্ষে ‘ভুমিহীন ও গৃহহীন’ অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণির দুর্যোগ সহনীয় ২৮টি টিনসিড পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে আশে পাশে অহস্থায়ী পলিথিন ছাউনিতে বসতি করছে ‘ভুমিহীন ও গৃহহীন’ উপভোগীরা।

জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে টেকনাফ উপজেলায় প্রকৃত গৃহহীনদের জন্য ২২৯টি বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৫৯হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২ কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি বাড়ির জন্য একটি শোবার ঘর, একটি রান্নার ঘর ও করিডোরসহ বাথরুম নির্মাণে ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

বাড়িগুলো নির্মাণে কোন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি ভূমি কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজ করছেন তবে তারা খাতা কলমে থাকলে ও সেই কাজের এক মৎস্য জিবির নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এই প্রকল্পে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার গ্রামে ২৮টি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে চুড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পে প্রতিটি ঘরের মালিককে নিজ ঘরের ভিটা নিজখরচে তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভুগিরা জানিয়েছেন।

এসময় জালাল উদ্দিন নামে এক উপভোগীকারী জানান, ‘টমটম চালিয়ে সীমান্তের বেড়ি বাঁধে ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন যাপন করতাম। সীমান্ত সড়ক নিমার্ণ কাজ শুরু সেখানে থেকে সরে যেতে হয়। এরপর ভুমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পরি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় সীমান্ত সড়কের পাশে আমাদের তিন শতক জমিসহ সেমি পাকা একটি করে ঘর বরাদ্দ দেয়। তবে এই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার কথা বলে মো. জাহাঙ্গীর আলম ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ঘর নির্মাণের মালামাল বহন খরচের জন্য ১১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ঘরে টয়লেট করে দেয়নি। তবে দুই-একদিনের মধ্য ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।’

আরেক অসহায় ভুক্তভোগী নুর বেগম জানান আমাকে হুমকি দিয়ে ২০-১৫হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। আবার কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে, কেউ শেষ সম্বল একমাত্র ফসলের জমি বন্দক রেখে, কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আবার কেউ ঋণ নিয়ে স্ব স্ব জাহাঙ্গীরকে টাকা দিয়েছেন বলে বিষয়টি সাংবাদিকদেরকে অবহিত করেন। অনেকেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মারধরের হুমকি দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর

উপভোগকারী হাবিব উল্লাহ জানান, ‘উপরে মহলে টাকা দিতে হবে না হলে ঘর পাওয়া মুশকিল। থাকার জন্য ঘরবাড়ি ছিল না। তাই কোন উপায় খোঁজে না পেয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সর্বমোট ঘরের জন্য ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ঘর বরাদ্দের জন্য জাহাঙ্গীর আলম ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাকি টাকা মালামাল আনতে খরচ হয়েছে। এরা কেমন মানুষ অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিনা টাকায় ঘর বরাদ্দ দিলেও সেখানে মিলেমিশে টাকা খাচ্ছে সবাই।

অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে কারো কাছে কোন টাকা নেয়নি। তবে মালামাল বহন খরচের জন্য প্রত্যকের কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শ টাকা করে নিয়েছি। আমি প্রকৃত খরচের টাকা নিয়েছি। কারন ঘর নির্মাণে মালামালের বহন খরচ কতৃপক্ষ দেয়নি। আমিও নিজে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। তাছাড়া এসব ঘর নিমার্ণের দেখবাল করতে উপজেলা প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব দেয়।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সিফাত বিন রহমান বলেন, তবে এই কাজের কাউকে দেখা শুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে অস্বীকার করেন তিনি আরো বলেন প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহার ঘরের জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি তবে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম থেকে জানতে চাইলে বলেন,এই ব্যাপারে এক সপ্তাহ আগে শুনেছিলাম আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি তবে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana