সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
আক্রান্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ। দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই শহরটির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী। এদিন কিয়েভসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। ওদিকে কিয়েভ আক্রমণের জন্য বেলারুশে আরও সেনাসমাবেশ করছে রাশিয়া। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, শহরটির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
শুক্রবারের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় লোকজন ভীত হয়ে পড়েছে। মূল রাজধানী শহরকে বাঁচাতে সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদেরও প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দখলদার বাহিনীকে হটাতে কিয়েভের বাসিন্দাদের পেট্রোল বোমা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা। রুশ বাহিনীর যে কোনও গতিবিধি বা তৎপরতার খবর কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।
রুশ বাহিনীর মোকাবিলায় কিয়েভে প্রবেশ করছে ইউক্রেনের সামরিক যান। স্থানীয় মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, কিছু এলাকায় গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছে। নাশকতাকারীরা ইতোমধ্যে কিয়েভে প্রবেশ করেছে। শত্রুরা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।
কিয়েভ রক্ষার অঙ্গীকার
একে-৪৭ রাইফেল হাতে নিয়ে কিয়েভের রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো। শহরটি রক্ষায় রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। যদিও এ দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এদিন কিয়েভের কাছে হোস্তোমেল বিমানবন্দর দখল করেছে রুশ বাহিনী। সেখানে এরইমধ্যে দেশটির প্যারাট্রুপাররা নেমে গেছে।
মস্কোর দাবি, পশ্চিম দিক থেকে কিয়েভে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রুশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ইউক্রেনের সেনা অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রথম দিনেই চেরনোবিলে দুর্ঘটনাকবলিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দখল নেয় রাশিয়া। শুক্রবার ইউক্রেনের পারমাণবিক শক্তি জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, পরিত্যক্ত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে গামা তেজস্ক্রিয়তা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী কেন্দ্রটি দখলের পর এই তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি শনাক্তের কথা জানালো সংস্থাটি।
ইউক্রেনের রাশিয়ান আগ্রাসনের ফলে ৫০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। এরইমধ্যে জ্বালানি ও নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে।
মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ
জীবন বাঁচাতে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে কিয়েভের বহু বাসিন্দা। অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা, হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বাঙ্কার ও বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে।
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে রাশিয়া। শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, এই প্রতিনিধি দল পাঠাতে প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধে আমরা আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রতিনিধি পাঠাতে প্রস্তুত।
ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে রাশিয়া?
আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় তার দেশ। পুতিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল আলোচনা সম্ভব।
সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, নব্য নাৎসিরা ইউক্রেন শাসন করুক সেটি চায় না রাশিয়া। মস্কো কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে তার আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দফতরের একজন উপদেষ্টা অবশ্য রয়টার্সকে বলেছেন, ইউক্রেন শান্তি চায় এবং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য তার দেশ প্রস্তুত।
ন্যাটোর সমালোচনায় এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইউক্রেনে রুশ হামলায় ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেছেন ন্যাটোর আরও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার পদক্ষেপকে নিন্দা জানানোই যথেষ্ট নয়। শুক্রবার ন্যাটোর যে শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে একটা সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ইউক্রেনে হামলার জবাবে পশ্চিমাদের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত মস্কো এটি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মন্তব্য করেছে ক্রেমলিন। মস্কো এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর।
Leave a Reply