সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
কোষ্ট ফাউন্ডেশনের সভায় বক্তারা:
রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত
করার আহবান
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: রোহিঙ্গা সংকট: প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ নিরসনে সামাজিক সংযোগ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্ব বিষয়ক এক আলোচনা সভা অদ্য ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ কোস্ট ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের হল রুমে অনুষ্টিত হয়।
এতে টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইএসসি প্রকল্পের সামাজিক সংযোগ কমিটির সদস্য, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক ও ক্যাম্পের অভ্যন্তলীণ স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন কতৃর্ক আয়োজিত সভাটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের ফিল্ড কোর্ডিনেটর মিজানুর রহমান বাহাদর ও আহাম্মদ উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল আহামেদ, হ্নীলা ইউনিয়নের মহিলা সদস্য মর্জিনা আক্তার, দৈনিক কক্সবাজার ৭১ এর সহ সম্পাদক সাংবাদিক তাহের নাঈম, কানজরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান, আলহাজ আলি আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আলমগীর চৌধুরী, হোয়াইক্যং ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মৌলভী নুরুল আমিন প্রমুখ।
দীর্ঘ আলোচনায় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
উখিয়া -টেকনাফ দুই উপজেলার স্থানীয় মানুষের উদারতা এবং বাংলাদেশ সরকারের মানবিকতার কারনে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় লাভ করেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের জীবনমান এবং নিরাপত্তার উপরে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ, ক্যাম্পের মধ্যে অপ্রত্যাশিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং প্রত্যবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা এবং স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। হোয়াইক্যং নয়াপাড়ায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের -এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। তারা আরও বলেন, স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের প্রতি এখনো মানবিকতা দেখিয়ে যাচ্ছে। অথচ কোনও রকম দায় না থাকার পরেও এই সংকটের প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের উপর।
স্থানিয় ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজী জালাল আহামেদ বলেন, ক্যাম্প গুলোতে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোস্ট ফাউন্ডেশন কতৃক বিভিন্ন সেশন ও সভার মাধ্যমে পরিচালিত সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি বিষয়ক প্রচারণা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং এর পরিধি আরো বাড়াতে হবে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘাত এবং মাদক কারবার প্রতিরোধে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
হ্নীলা ইউপির মর্জিনা আক্তার বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতে বাধা সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করতে হবে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কতৃক অপহরণ, কাঁটাতারের অব্যবস্থাপনার কারণে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বসবাসরত স্থানীয়দের সহায়তার অভাব, শ্রমবাজার দখল, স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে অবৈধ বিবাহজনীত সম্পর্ক বৃদ্ধির কারণে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বের জন্য রোহিঙ্গাদের প্রতি দিনদিন স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাষ্টার আব্দুল মান্নান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকহাওে নেতিবাচক প্রবাব পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রীদের চাকরিতে প্রবেশের ফলে অতদ অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার হার ১০% এ কমে এসেছে। এনজিওদেরকে কর্মী নিয়োগের সময় এইসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
মাষ্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এর বিকল্প নেই। স্থানীয় মানুষের জন্য সহায়তার ২৫ % বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মিডিয়ায় রোহিঙ্গা বিরোধী নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশে আরো সতর্ক হতে হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক তাহের নঈম বলেন, ২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় অবস্থান করার পর থেকে স্থানীয়দের নানাধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য অসংখ্য গভীর নলকূপ স্থাপন করে ভু-গর্ভের পানির স্তরে চাপ ফেলা হয়েছে। শুষ্ক মৌষুমে স্থানীয় মানুষেরা তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply