বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের সংঘাতের আশঙ্কা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের সংঘাতের আশঙ্কা

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, গুলাগুলিতে খুন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে থাকা ক্যাম্পে যেকোন সময় ফের বড় ধরনের সঙ্ঘাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা, আল ইয়াকিনসহ একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। এরা প্রতিশোধপরায়ণ। তাই একের পর এক ঘটনা ঘটছে। দিনের বেলায় ক্যাম্প স্বাভাবিক মনে হলেও রাতের বেলায় চিত্র পাল্টে যায়। ক্যাম্পে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে। তবে এসব ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না সাধারণ রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারে থাকাকালে বিরোধের জের এবং নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে থাকায় পুরনো রোহিঙ্গাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। এ কারণে ক্যাম্পে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানান, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের নেতাদের সাথে আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের নেতাদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল রয়েছে। এক রোহিঙ্গা অন্য রোহিঙ্গাকে সহ্য করতে না পারায় এবং নেতৃত্বের আধিপত্যকে ঘিরে ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষিত এক রোহিঙ্গা যুবক জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের দুই গ্রুপের মধ্যে চাঁদাবাজি, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ক্যাম্পে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক রোহিঙ্গা নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বরের কথা আমরা ভুলিনি। অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ই-ব্লকের মোহাম্মদ ফরিদ ও এফ-ব্লকের নুর হাশিম, মাস্টার মুন্না এবং আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের নেতা রফিক উদ্দিন, হাফেজ জাবেদ ও সাইফুলের মধ্যে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়। সেই থেকে ক্যাম্পে অপহরণ বাড়ার পাশাপাশি রাতে মুখোশধারী সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। এতে করেই সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। বছর যেতে না যেতেই আবারো গুলি করে হত্যা করেছে আমাদের রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে। দেশ-বিদেশে তার সুনাম ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নেতৃত্ব দেয়ায় তাকে সহ্য করতে না পেরে খুন করেছে তার প্রতিপক্ষরা। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, অপহরণকারী ও মুখোশধারী রোহিঙ্গা অপরাধী বাড়ছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে রোহিঙ্গারা দ্বিধা-বিভক্তিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ-গোলাগুলি লেগেই থাকে। হত্যাকাণ্ড-চাঁদাবাজি ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে আমরা স্থানীয়রাও আতঙ্কে আছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তাদের সব সময় তৎপর দেখা যায়।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এআরএসপিএইচ কার্যালয়ে একদল অস্ত্রধারীর গুলিতে তিনি নিহত হন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক জানান, ক্যাম্পে যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরেক রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করলে মুহিবুল্লাহর মৃত্যু হয়।
তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবিরে মহাসমাবেশ করে আলোচনায় আসেন মুহিবুল্লাহ। একই বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করে ১৭ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ২৭ জন প্রতিনিধি অভিযোগ দেন মুহিবুল্লাহ ছিলেন তাদের একজন।
রোহিঙ্গাদের যত সংগঠন ও নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম এই মুহিবুল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি সংগঠনটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করে মুহিবুল্লাহ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana