সাবরাং পর্যটন কেন্দ্রসহ বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কে ৬ প্রতিষ্ঠানকে ১৭ একর জমি বরাদ্দ
নিজস্ব প্রতিবেদদক:
দেশের পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টেকনাফের সাবরাং পর্যটন কেন্দ্রে ৩ প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্কে দেশের ওষুধ খাতের আরও একটি প্রতিষ্ঠান জমি বরাদ্দ পেয়েছে। ৪টি গ্রুপের ৬ প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৭ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। গতকাল বুধবার বেজা কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইফাদ মোটর্স, ডার্ড গ্রপ এবং ইস্ট ওয়েস্ট ট্যরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (প্রাইভেট) লিমিটেড। সভায় সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বেজার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বরাদ্দকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যারহাউস, লজিস্টিক এলাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার, সড়ক, ডরমিটরি, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সবুজায়ন করবে। এছাড়া সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ১ একর জমিতে হোটেল নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে।
এ সময় বেজার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন নির্বাহী সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল আজিম চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, হেলথকেয়ারের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, ইফাদ মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমদ, ডার্ড গ্রুপের পরিচালক সেঁজুতি দৌলাহ, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের পরিচালক মাহমুদুল হোসাইন শুভ।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বেজা বাংলাদেশে বিনিয়োগ-বান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। মিরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প নগর নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে।
তিনি বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিরানভূমি আজ শিল্পের পদচারণায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে, সেই সাথে দ্রুত শিল্প স্থাপনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সকল সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বেজা সম্পন্ন করছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটিকে একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেজা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পর্যায়ে ৩০ একর জমিতে তাদের দ্বিতীয় শিল্প স্থাপনের পর গতকাল আরও ১০ একর যুক্ত হওয়ার ফলে মোট ৪০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। এতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ইফাদ মোটরস সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৩৭০ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ১০ তলা ৩ তারকা হোটেল নির্মাণ ও পরিচালনা, বিনোদন ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ প্রস্তাব থেকে জানা যায়, এতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে এবং ৩ শতাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ডার্ড গ্রুপ সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্রুপটির তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ২ একর, ২ একর এবং ১ একর করে তিনটি প্লটে হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট স্থাপন করবে। সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে প্রায় ৭০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে হোটেল ১ একর জমিতে হোটেল স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এতে প্রায় ২ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ২০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মর্মে বিনিয়োগ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমির উপর একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প শহর-‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কেও অবস্থান বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার সাগর তীরে অবস্থিত। এ ট্যুরিজম পার্কে মোট জমির পরিমাণ ৯০০ একরের বেশি। পার্কটি বাস্তবায়িত হলে ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।