শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন

`সালাম’ সবার প্রতি শান্তির বার্তা

`সালাম’ সবার প্রতি শান্তির বার্তা

সালাম শান্তির প্রতীক। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।

সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবে, “তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা সুখী হও।” (সুরা : জুমার : ৭৩) এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। “সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সুরা : ইউনুস : ১০) এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৮)

পরিচিত কিংবা অপরিচিত সবাইকেই সালাম করতে হয়। (বুখারি, হাদিস : ১২) শুধু তা-ই নয়, সালাম এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় রয়েছে : তার মধ্যে অন্যতম হলো, কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩৬)

সালামের মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় হয়। হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। এ ছাড়া এতে আল্লাহর জিকির পাওয়া যায়। আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। সালাম মুসলিম ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্প্র্রীতি প্রকাশ করে। সালাম মুসলিম ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দোয়া। সালাম মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে এ চুক্তি যে আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনি কোনো কষ্ট পাবেন না। হাদিস শরিফে এসেছে, প্রথম সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত। এতে বোঝা যায়, আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দারাই সালামের মতো মহৎ গুণে অভ্যস্ত হতে পারে। এর উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ : ৫১৯৭)

অর্থাৎ যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩১)

উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষের সালামের আদব শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের, অর্থাৎ ছোটরা বড়দের। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায়, বয়সে ছোটদের উচিত বয়সে বড়দের আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু বড়রাও চাইলে ছোটদের আগে সালাম করতে পারেন। কেননা সালাম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সুতরাং যে আগে সালাম দেবে, সে-ই আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হবে। তাই হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুজন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হলে কে প্রথম সালাম দেবে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটবর্তী। (তিরমিজি, হাদিস :  ২৬৯৪)

অনেকে ভাবেন পদবিতে ছোটরাই পদবিতে বড়দের সালাম দিতে হয়। তাই পদবিতে ছোট ব্যক্তি বয়সে বড় হলেও তাকে সালাম দেন না। এটা ঠিক নয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি সালামের প্রচার-প্রসার করার তাওফিক দান করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana