বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন
শেষের দিকে খেলা জমিয়ে দিয়েছিলেন ধোনি আর জাদেজা। কিন্তু রানের পাহাড় তখন চেপে গেছে ঘাড়ে। এতো রান পার করা চেন্নাইয়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। মনে হচ্ছিল হায়দরাবাদ সহজে ম্যাচ পকেটে পুরে নেবে। কিন্তু ধোনি! তিনি যে এখনও মাঠে। তিনি প্রায় লড়াই করে তুলে এনেছিলেন ম্যাচ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল ক্লান্তির কাছে।
বয়স হচ্ছে ক্যাপ্টেনের, তার ছাপ আজ আরও স্পষ্ট হলো। হায়দরাবাদ জিতল ৭ রানে। এদিন শুরুতেই অ্যাডভান্টেজ পান ওয়ার্নাররা। কারণ, টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ধোনিও স্বীকার করেন, তিনিও টসে জিতলে ব্যাট করতেন। তবে ভালো খবর দলে ফিরছেন, ব্র্যাভো ও অম্বতি রায়াড়ু।
শুরুটা ধরে খেলেন ওয়ার্নাররা। রানের গতি তেমন ছিল না। প্রথম ওভারেই জনি বেস্টোর উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপে উড়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদ। তাই ধরে খেলতে শুরু করেন মণীশ পাণ্ডে আর ওয়ার্নার। সাত ওভারের মাথায় ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট পরে। ফিরে যান মণীশ। তিন ওভার কাটতে না কাটতেই রান আউট হয়ে ফিরে যান কেন ইউলিয়ামসন।
পরপর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদ। কিন্তু তারপর খেলা ধরেন প্রিয়ম গর্গ। অনুর্ধ্ব উনিশ দলের এই তারকাই শেষ পর্যন্ত বৈতরণী পার করেন হায়দরাবাদের। গর্গ আর অভিষেক শর্মা খেলা ধরে রাখেন শেষ পর্যন্ত। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন। আর সেই কারণেই লড়াই দিতে শুরু করে হায়দারাবাদ। মাঝে এক ওভারে একাধিক ক্যাচ পড়ে গর্গের। তার সুযোগও নেন তিনি। কিন্তু কপালের ফেরে আউট হওয়া থেকে বাঁচলেও প্রিয়ম গর্গের ইনিংসকে কখনই ছোট করে দেখার উপায় নেই। কারণ, এতোবড় ময়দানে এই বয়ে এমন দায়িত্ববান ইনিংস বড় খেলোয়াড়রাই খেলতে পারেন।
আগের দিনের থেকে এদিন অপেক্ষাকৃত আঁটোসাঁটো ছিল চেন্নাইয়ের বোলিং আর ফিল্ডি দীপক চাহার দুটি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর ও পীযূষ চাওলা। সব মিলিয়ে কুড়ি ওভারে ১৬৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ইনিংস শেষ করে হায়দরাবাদ।
এই পিচে ব্যাটিং করা যে খুব একটা সহজ কাজ নয় সেটা চেন্নাই ব্যাট করতে নামতেই আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। চেন্নাইয়ের জন্য চিন্তার কারণ ওয়াটসনের ফর্ম। এদিনও তিনি মাত্র ১ রানে আউট হয়ে ফেরেন ভুবনেশ্বর কুমারের বলে। দলে ফেরা রায়াড়ু আর ফাফ ডুপ্লেসি এসে খেলা ধরলেও রায়াড়ুর আয়ু বেশিক্ষণ ছিল না।
নটরাজনের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। ৫ ওভারে ২৬ রানে আটকে গিয়ে চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। চাপ বাড়তে থাকে আরও। কেন উইলিয়ামসন রান আউটের দুঃস্বপ্ন বোধহয় মনে রেখেছিলেন। সেই কারণে তার হাত থেকে ছোড়া বলেই ফিরে যান ফাফ ডুপ্লেসি। যাকে মারাত্মক লাগছিল, তাকেই ফেরাতে সক্ষম হয় হায়দরাবাদ। আর তারপরেই ক্রিজে আসেন ধোনি। দলের চরম এক সংকটের সময়ে ক্যাপ্টেন কুল মাঠে নামেন। কিন্তু কেদার যাদব কিছুটা উইকেট ছুড়ে দিয়ে ফিরে যাওয়ায় আরও মুশকিলে পড়ে চেন্নাই। ১০ ওভার শেষে চার উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৪ রান ওঠে বোর্ডে। এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন জাদেজা এবং অধিনায়ক ধোনি। কিন্তু হায়দরাবাদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের সামনে যেন কিছুতেই হাত খুলতে পারছিলেন না ধোনিরা।
শুধু বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও এদিন এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়েনি হায়দরাবাদ। তবে তার মধ্যে এদিন ব্যক্তিগত স্তরে আইপিএল কেরিয়ারে ৪৫০০ রানে পৌঁছে যান ধোনি। তখনও শেষ ২৪ বলে দরকার ৭৮ রান। তারপরই হঠাৎ পানির মতো রান আসতে শুরু করে। ক্যাচ পড়ে রবীন্দ্র জাদেজার। ৫০ রান করে ফেলেন তিনি, নটরাজনের বলে একটা বড় ছয় হাঁকিয়ে। পরের বলেও মারতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়ে যান বাউন্ডারির আগে। তখন ১৪ বলে দরকার ৫১ রান। তারপর যেন একের পর একটা ঘটনা ঘটতে শুরু করে। আহত হয়ে ফিরে যান ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৮ রান। ক্রিজে ছিলেন ধোনি। পারলেন না। হার মানলেন ক্লান্তির কাছে। সাত রানে ম্যাচ জিতল হায়দরাবাদ।
তবে সবচেয়ে নজরে পড়ল ধোনির ক্লান্তি। ক্রমে যে বয়সের ভার তাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে, সেটা এই ম্যাচে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল। এ যেন একেবারে অচেনা ধোনি, যিনি দৌড়ে রান নেয়ার সময় হাঁফিয়ে উঠলেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন ব্রেক নিতে।
Leave a Reply