মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ন
অনিয়ম-দুর্নীতি উৎকোচ গ্রহণের আখড়ায় পরিণত হয়েছে হ্নীলার পল্লী বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্র: ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী ভুক্তভোগীদের দাবী।
নিজস্ব প্রতিবেদক, টেকনাফ।
“গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে উৎকোচ গ্রহণ, টাকার বিনিময়ে বানিজ্যিক ও আবাসিক লাইন সংযোগ, অফিসের খরচে লাইন নির্মাণ ও সংযোগ প্রদান করে মোটা অংকের টাকা লেনদেন” অনিয়ম-দুর্নীতি উৎকোচ গ্রহণের আখড়ায় পরিণত হয়েছে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির টেকনাফ জোনাল অফিসের হ্নীলার অভিযোগ কেন্দ্রটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বপন কুমার দে টেকনাফ জোনাল অফিসের হ্নীলার অভিযোগ কেন্দ্রে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে হ্নীলা ও হোয়াইক্যংয়ের প্রতিটি গ্রামে নিজের পছন্দের দালালদের সিন্ডিকেট তৈরি করে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুরু করেন রমরমা বাণিজ্য। আবাসিক মিটার সংযোগ থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক লাইন নির্মান, ট্রান্সফরমার বাণিজ্য, লাইন মেরামত ও সংযোগ আবেদন ও কোন ট্রান্সফরমার নষ্ট হলেই, শুরু হয় নানান তাল-বাহানা। গ্রাহক এক প্রকার জিম্মি হয়েই উপায়ান্তর না পেয়ে অফিসের শরণাপন্ন হন। অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠিয়ে দেয়ে ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমারের কাছে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে স্বপন কুমার নিজের পকেট ভারি করছেন বছর ধরে।
হ্নীলা অভিযোগ কেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানায়, স্বপন কুমার স্যার এই অফিসে যোগদান করার পর থেকেই অফিসের নিয়ম পাল্টে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। তাকে টাকা না দিলে একটি কাজেও স্বাক্ষর করেন না তিনি। তার মধ্যে বিশেষ করে স্যার আসার পর থেকে যতগুলো ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে প্রতি ট্রান্সফরমার থেকে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০/১৫ হাজার টাকা নিয়ে ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। এমন কি গ্রাহকের সাথে ভাল ব্যবহারও করেন না সব সময় দুর্ব্যবহার করেন। বলতে গেলে কোন গ্রাহক ঠিকমত সবা পায় নি।
লেদা লামার পাড়ার হেফাজ উদ্দিন জানান, আমাদের এলাকার ট্রান্সফরমারটা নষ্ট হয়ে গেলে আমারা হ্নীলা অফিসে যোগাযোগ করি। অভিযোগের ২দিন পর হ্নীলা অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র স্বপন কুমার দে তদন্ত করতে যায়। ট্রান্সফরমার নাই বলে অফিসে চলে যায়। ইঞ্জিনিয়র এর একজন দালালের মাধ্যমে খবর দেন যদি ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় তা হলে আগামি কালকে ট্রান্সফরমার লাগানো হবে। আমরা এলাকাবাসী মিলে প্রতিটি বাড়ি থেকে টাকা তুলে কোনমতে ৬ হাজার টাকা হ্নীলা অফিসে গিয়ে ইঞ্জিনিয়রের হাতে টাকাটা দিলে প্রথমে সেই ৬হাজার টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার লাগাতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে আমরা গরিব মানুষ এসব টাকা দিতেও আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে বলার পর গাড়ি ভাড়া যদি আমরা বহন করি তা হলে ট্রান্সফরমার লাগানো যাবে বলে জানায়। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার পর আমাদের এলাকায় ট্রান্সফরমার লাগানো হয়।
হ্নীলা বাসস্টেশনের দর্জির দোকানদার নুর মোহাম্মদ জানান, আমাদের ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে আমরা হ্নীলা অফিসে অভিযোগ করলে ট্রান্সফরমারের জন্য টাকা দাবি করলে আমাদের প্রতিটি দোকান থেকে ২০০টাকা করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমাদের ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হ্নীলা অভিযোগ কেন্দ্রের একজন কর্মচারী জানান, স্বপন কুমার স্যার হ্নীলা অফিসের যোগদানের পর থেকে কমপক্ষে ৫০ টার মত ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। প্রতিটি ট্রান্সফরমার থেকে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে ট্রান্সফরমারের লাগিয়ে দিয়েছে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে স্বপন কুমার স্যার নিজের পকেট ভারি করছেন বছর ধরে।
পল্লী বিদ্যুতের হ্নীলা অভিযোগ কেন্দ্রের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার দেব জানান, ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়া ও দুর্ব্যবহারের বিষয়টি মিথ্যা ও অপ-প্রচার বলে জানান। তিনি দাবী করেন তার বিরুদ্ধে আগের দালালরা সুযোগ না পেয়ে মিথ্যা অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো যদি কোন অনিয়ম হয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply