বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার আদালতের দন্ডিত আবছার সভাপতি হতে মরিয়া!

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার আদালতের দন্ডিত আবছার সভাপতি হতে মরিয়া!

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার আদালতের দন্ডিত আবছার সভাপতি হতে মরিয়া!      প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থীর উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
লুটেরা শিক্ষক ও কমিটির সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে পেশীশক্তির প্রভাব বিস্তার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এর প্রতিবাদ করতে পারেন এমন শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে শোকজ, বেতন বন্ধ, বরখাস্তের মতো পথ বেছে নেওয়া হয়। দুর্নীতির কারণে আজ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। লুটপাটের টাকা ফেরত দেওয়ারও নজির নেই। আর পর্ষদ পক্ষে থাকলে অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককেও ন্যূনতম বেকায়দায়ও পড়তে হয় না। ফলে বিদ্যালয় সমুহে তারা রাম রাজত্ব চালায়।
এক অনুসন্ধানে টেকনাফ হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন একটি চিত্র জনতার সামনে দৃশ্যমান হয়েছে।
এতে দেখা গেছে সভাপতি নির্বাচন কে কেন্দ্র করে কতিপয় মাদকাসক্ত ও আদালতের সাজাপ্রাপ্ত দুর্বৃত্তদের তান্ডব,হুমকি ও মারধরের ঘটনা। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচন কে কেন্দ্র করে হট্টগোল আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দূর্বৃত্তরা ভদ্র,নম্র এক সভাপতি প্রার্থী কে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আক্রমণ সহ নানা ও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়,টেকনাফ
উপজেলার হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২১ মে রবিবার সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক বৈঠক আহবান করে।
হ্নীলার মরহুম আব্দুসসালাম কোম্পানির পুত্র শেখ মো: রফিক উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল-২০২৩ তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ম্যানেজিংকমিটির সভাপতির পদ শূন্য হওয়ায় সভাপতি নিয়োগ সংক্রান্ত এক বৈঠক গত ২১ মে হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ নূরুল আবছার,প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য সহ স্থানীয় মান্যগন্য ব্যাক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সকলে পরিচিত পর্ব শেষ সভাপতি নির্বাচনে কার্ক্রম শুরু করলে (০১) মাষ্টার রশিদ আহমদ (০২) আবছার কামাল নোবেল সভাপতির প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দেন। প্রথমে আবছার কামাল নোবেলের পক্ষে তার বোন পারভিন আক্তার বিউটি আবছারের সভাপতির প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ম্যানেজিং কমিটির সিনিয়র দাতা সদস্য মাষ্টার রশিদ আহমদ ও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন। মাষ্টার রশিদ সভাপতির প্রার্থী ঘোষণা দিতে না দিতেই আবছার কামাল ও তার লোকজন মারমুখী হয়ে উঠে। তার উৎপেতে থাকা বাহিনী হৈচৈ অশ্লীল গালমন্দ শুরু করে। আবছার কামাল তখন দম্ভ করে বলেন,হ্নীলা গার্লস স্কুল আমার পৈত্রিক সম্পত্তি! আমার পিতা স্কুলের জমি দাতা। আমার বাইরে কেউ কথা বললে তাকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। আমার ভাই মরণে উত্তরাধিকার সূত্রে আমিই সভাপতি।
এক পর্যায়ে আবছার ও সজ্জিত বাহিনী ধর ধর মার বলে চিল্লাতে থাকে। এক পর্যায়ে সভা পন্ড হয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার দ্রুত স্কুল ত্যাগ করে।
একাডেমিক সুপারভাইজার চলে যাওয়ার মুহূর্তেই সভাপতি প্রার্থী মাষ্টার রশিদ আহমদ ও তার ৩/৪ ছেলে কে আবছারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী আক্রমন করে। স্থানিয় ডাক্তারের নিকট প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিষয় টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট অবহিত করেন।

জানা যায় মরহুম আব্দুসসালাম কোম্পানির পুত্র তথাকথিত সভাপতি র দাবীদার আবছার কামাল নোবেল কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুড়িশিয়াল আদালতের সাজা দেয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি।
আবছার কামাল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা ও রয়েছে। সিআর ১২৩/১০(টেকনাফ) মামলায় ১২.৪.২৩ ইং জাহাংগীর আলম বর্তমানে জেল হাজতে
আছে। আবছার কামাল নোবেল এর বিরুদ্ধে ও ৬০৬/১১ ইং নারী নির্যাতন সহ বহু মামলা রয়েছে। তারভাই জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে জি,আর-
২১৯/১৯(টেকনাফ)২২০/১৯(টেকনাফ),২২১/১৯(টেকনাফ),নারী ৬০৬/১১ ইং,মাদক,অস্ত্র,হত্যা সহ একাধিক মামলা আছে। অপর মাদকাসক্ত ভাই আনোয়ার পারভেজের বিরুদ্ধে মাদক,অস্ত্র,ডাকাতি সহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।
টেকনাফের এক আইনজীবীকে মারধরের ঘটনায় তারা ৩ ভাই কে সাজা দিয়েছে আদালত। মামলা হওয়ার এক যুগ পর সম্প্রতি ১২ এপ্রিল বুধবার কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুড়িশিয়াল আদালতের বিচারক কৌশিক আহমেদ খন্দকার এই রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে আব্দুস সালাম কোম্পানির ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)কে ১ বছর, আবছার কামাল (৩৭)কে ৬ মাস ও আনওয়ার (৪০)কে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট  টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব পানখালী এলাকায় নিজের বসত-বাড়ির উঠোনে যাকাতের টাকা বিলির সময় অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম চৌধুরী ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায় একই এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আবছার, মো: আনওয়ারসহ বেশ কয়েকজন। এতে গুরুতর আহত হন প্রবীণ আইনজীবী শাহ আলম চৌধুরী।
পরে এই ঘটনায় আহত অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন৷ মামলা নং- ১২৩/২০১০। পরে এই মামলায় দীর্ঘ শুনানীর পর বৃহস্পতিবার রায় দেয় আদালত। রায়ে আসামী জাহাঙ্গীর আলমকে ১ বছর, আফসারকে ৬ মাস ও মো. আনওয়ারকে ৬ মাস সাজা দেওয়া হয়। তবে মামলা থেকে দেলোয়ার, রফিক, সরোয়ার ও নুরুল আমিনকে খালাস দেওয়া হয়।

এব্যাপারে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো: নুরুল আবছারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হৈচৈ অপ্রীতিকর ঘটনার কথা স্বীকার করেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি সভাপতির পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি যেই হোক, সভাপতি হওয়ার কোন প্রকার সুযোগ নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলে সংযোগ দেয়া যায়নি।

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন সদস্য জানায়,একজন দন্ডিত আসামী কিভাবে স্কুল গভর্নিং বডির সভাপতি প্রার্থী হয়?
এ নিয়ে জনমনে নান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে দুর্নীতি আর লুটপাটের অভয়ারণ্যে পরিণত করার জন্য এটি একটি অকৌশল মাত্র। বিগত আমলের সভাপতি (আবছারের ভাই) উক্ত বিদ্যালয়ের ১লাখ ২০ হাজার টাকা হাওলাত বা কর্জ নিয়ে উক্ত টাকা নিজেই আত্মসাত করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মোক্ষম সময় এখন-ই বলে সভাপতি হতে আবছার মরিয়া!
এ বিষয়ে আবছারের বক্তব্য নেয়ার জন্য ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তার অপর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয় টি এড়িয়ে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana