মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ২৪ ::
বাংলাদেশের এক তরুণ আলেম ও গবেষক শায়খ এরশাদুর রহমান সৌদি আরবের বিশ্ববিখ্যাত মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট (মাহাদু তালীমিল লুগাহ আল আরাবিয়াহ)-তে শিক্ষকতা করবেন।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী গ্রামের সন্তান শায়খ এরশাদুর রহমানের শিক্ষাযাত্রা শুরু হয় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুস সুন্নাহ, হ্নীলা হতে। তার পর চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়াতে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
তারপর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে রওনা দেন মদিনার পথে। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি প্রথমে ফ্যাকাল্টি অব এরাবিক ল্যাংগুয়েজ-এ পড়াশোনা করেন। এখানেই তিনি গভীরভাবে আরবি ভাষাতত্ত্বে মনোনিবেশ করেন। পরবর্তী সময় একই বিভাগ থেকে এমফিল সম্পন্ন করেন এবং বর্তমানে পিএইচডি করছেন।
তার এমফিল গবেষণার বিষয়— “أثر اللغة العربية في اللغة البنغالية: دراسة تقابلية” (বাংলা ভাষায় আরবি ভাষার প্রভাব : একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন)।
এই গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, কারণ মদিনায় আরবি ভাষায় বাংলা ভাষা নিয়ে এটিই প্রথম একাডেমিক কাজ। গবেষণাপত্রটির মুনাকাশা (আলোচনাসভা) অনুষ্ঠিত হয় ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাষাবিদগণ।
গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ড. যুবাইর বিন মুহাম্মাদ আইয়্যুব—যিনি বিশ্বখ্যাত ক্বারী আইয়্যুবীর সুযোগ্য সন্তান। তার তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বাংলা ভাষা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা। এর শিকড় ও শব্দভাণ্ডারে আরবি ভাষার প্রভাব গভীরভাবে নিহিত। নাম, পরিভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রেই আরবি শব্দ ও ধ্বনির উপস্থিতি লক্ষণীয়।
কিন্তু এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক গবেষণা দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রতুল ছিল। শায়খ এরশাদুর রহমানের এ কাজ তাই শুধু একাডেমিক নয়, বরং বাংলাদেশ ও আরব বিশ্বের ভাষাতাত্ত্বিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইসলামি জ্ঞানকেন্দ্র। এখানকার শিক্ষক হওয়া মানে শুধু ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও এক বিরাট অর্জন। কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো—বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও বিশ্বমানের গবেষণা ও জ্ঞানে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
শায়খ এরশাদুর রহমানের এ অর্জন তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর পথ দেখাচ্ছে—যদি পরিশ্রম, ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা থাকে, তবে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন শিক্ষার্থীও মদিনার মতো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতার মর্যাদা অর্জন করতে পারে।
শায়খ এরশাদুর রহমানের এই নিয়োগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। টেকনাফের ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু করে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা— এ যাত্রা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর।
Leave a Reply