রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, আদর্শগত মতভেদ থাকলেও, রাজনৈতিক কৌশলগত মতভেদ থাকলেও, নির্বাচনের ইস্যুভিত্তিক মতভেদ থাকলেও, আমরা যেন ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যটাকে ধরে রাখি।
শনিবার রাজধানীর গুলশান লেকশোতে একটি সেমিনারে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ; জনমানুষের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই)।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যদি আমরা স্ট্যাবল একটা রাষ্ট্র চাই, আমাদের রাষ্ট্রটা ৫৪ বছরের হয়ে গেছে। সামনে যাতে অনাগতকাল বা ইনফিনিটিভ পিরিয়ড পর্যন্ত এই রাষ্ট্রটা বহাল থাকে, স্বাধীনতা থাকে, সেজন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য দরকার।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার একটা সুযোগ এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছিল এবং আমরা সেটা গ্রহণ করেছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য যেটা গঠিত হয়েছে, এটাই হবে আমাদের রাষ্ট্রের একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি। এই জাতির সেই শক্তিটা আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, আদর্শগত মতভেদ থাকলেও, রাজনৈতিক কৌশলগত মতভেদ থাকলেও নির্বাচনের ইস্যুভিত্তিক মতভেদ থাকলেও যেন ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যটাকে ধরে রাখি। এখানে যেন আমরা মতানৈক্য না আনি।
তিনি আরো বলেন, এখন যারা বলছেন যে ঈশান কোণে মেঘ দেখা যাচ্ছে, যে কথা দুয়েকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন রকমের বক্তব্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বা সুবিধা আদায়ের বা যেকোনো উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করছে, সেটাকে আমি বক্তব্য হিসেবে স্বাগত জানাই। ডেমোক্র্যাটিক রাইট হিসেবে তাদের সেইটা আছে, সেটাকেও স্বাগত জানাই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এন্ড অফ দ্য ডে (দিনের শেষে) জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থান না হওয়ার এই প্রত্যাশার স্বার্থে, তারা সবাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেরত আসবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না আনি, তাহলে ভবিষ্যতে ডেমোক্র্যাটিক প্র্যাকটিসটা আগের মতো হবে- যেটা আমাদের কাম্য নয়। সুতরাং জনবান্ধব এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সাথে মিল রেখে আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি অবশ্যই প্রবর্তন করতে হবে। এবং সেই সমস্ত সংস্কৃতির চর্চা মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি যাতে বিলুপ্ত হয়, সেটার প্রচেষ্টা আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে। তবে এই সংগ্রাম একদিনে শেষ হবে না। রাতারাতি কোনো কালচারকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, তবে শুরু করা সম্ভব। এবং সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রচলনের মধ্য দিয়ে প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ থাকবে মতভিন্নতা থাকবে এবং রাজনৈতিক আদর্শভিত্তিক কৌশলভিত্তিক নির্বাচনে কৌশলভিত্তিক বিভিন্ন রকমের বক্তৃতা বিবৃতি থাকবে, সেটার বিষয়ে আমাদের সহনশীল হতে হবে। পরস্পর সহমর্মিতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের নিজস্ব বক্তব্য দিয়ে সেটাকে ফেস করব। এটাই হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক কালচার। আমরা সেটা নিজেদের পক্ষ থেকে এবং অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে প্র্যাকটিসটা দেখছি। সিনিয়র পলিটিশিয়ান ঈশান কোণে মেঘ দেখতে পেলেও আমি কিন্তু ঈশান কোণে কোনো মেঘ দেখতে পাইনি। আমরা রাতারাতি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করি, আশা করাটাই হচ্ছে আমাদের জন্য অতিরিক্ত আশা করা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রত্যেকেই তর্ক-বিতর্ক করেছেন। কিন্তু কখনো সৌহাদ্যপূর্ণ বা হৃদতাপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্ন হয়নি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায় কোনটা? সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে আমাদের এই অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শতভাগ লেজিটিমেট সরকার। এবং কনস্টিটিউশনালি লেজিটিমেট সরকার। প্রশ্ন উত্থাপন করলে, আমরা রাষ্ট্রে এই সরকারকে ইললিজিটিমেসির দিকে নিয়ে যাব। যেটা রাষ্ট্রের স্টেবিলিটির জন্য কখনোই সুখকর হবে না এবং সেই প্রশ্নও অবান্তর।
এখন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা- এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে কিসের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে?’ এমন প্রশ্ন রাখেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
Leave a Reply