শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
হোয়াইক্যং ইউপির ঝিমংখালীতে তুচ্ছ ঘটনা কে কেন্দ্র করে হামলা: নারী সহ আহত-৫ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন, ‘অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত: বললেন আইনমন্ত্রী কঠিন সময় পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা আ.লীগের আছে: ওবায়দুল কাদের মার্কিন ভিসানীতি-নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না আ.লীগ: ওবায়দুল কাদের ভিসার বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য ‘অপমানজনক ও লজ্জাজনক: ফখরুল আমার ছেলে ওখানে আছে: সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে করবে, তাতে কিছু আসে যায় না: প্রধানমন্ত্রী পল্টনে ব্যাংকে ঢুকে ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২ পুলিশ কনস্টেবলসহ গ্রেপ্তার ৫ খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলো পদে পদে হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি
রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা : ক্যাম্পে কঠোর নজরদারী প্রয়োজন

রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা : ক্যাম্পে কঠোর নজরদারী প্রয়োজন

বিশেষ প্রতিবেদক।

মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। আর আশ্রয় দিয়েই বিপদে পড়েছে সরকার। এদের নিয়ে সৃষ্ট সংকট এবং প্রত্যাবাসন কোনোটতেই আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বরং গত তিন বছরে এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে দিন দিন বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। আর এই ঝুঁকি মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের টাস্কগ্রুপ গঠনের পাশাপাশি মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত হচ্ছে পৃথক জাতীয় কমিটি।
সূত্রে জানা গেছে, মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নানা দেন দরবারেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। বরং মাদক, চোরাচালান, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতামুলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তারা। এতে জঙ্গিবাদের শঙ্কাসহ বিষয়টিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি মনে করছে সরকার। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতামূলক কার্যক্রম, বিভিন্ন বাহিনী গঠন ও আন্তর্জাতিক নানা ইন্ধন ঠেকাতে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে ঘাটতি দেখছেন নীতি নির্ধারকরা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে ঘাটতি দূর করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নগদ অর্থের লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট করছে। নগদ অর্থ লেনদেনের কারণে ক্যাম্পে অপরাধমুলক কার্যক্রম দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারা দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।’
এদিকে গোয়োন্দা সংস্থাগুলো থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা প্রশাসনের অগোচরে বিভিন্ন নামে বেনামে কমিটি গঠন করছে। যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। সরকারে বিভিন্ন বাহিনী দিনের বেলায় ক্যাম্পে কাজ করলেও রাতে ক্যাম্পে কী ঘটে তা নিরাপত্তায় নিয়োজিত কেউ জানে না। সেজন্য উচ্চ পর্যায়ের সমন্বিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ করা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হলেও ফলাফল আশানুরূপ নয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার ফিরে যেতে রাজি হয় সেজন্য এনজিওগুলোকে কাজে লাগানোর সুপারিশ করা হয়।
দেশের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে সবাই নিরাপত্তা ঘাটতি দূর করার তাগিদ দেন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে টাস্কগ্রুপ গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পাশপাশি সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মানবিক সহায়তা জরুরি ত্রাণ, এনজিওর নিবন্ধন ও তাদের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এরা শুধু যে এখানে বসবাস করছে তা কিন্তু নয়; এখানে তারা মাদক, চোরাচালান, খুন, ছিনতাই, ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা ঝুঁকিতে চলে গেছে। এদের সঙ্গে আন্তজার্তিক অপরাধীদের সংযোগ থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত যদিও সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে ভবিষ্যতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। ক্যাম্পগুলোতে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি সবাই কাজ করছে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী। আমরা চাই, বিচ্ছিন্নভাবে না করে একটা সমন্বয় হোক। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি এক লাখ রোহিঙ্গাকে দ্রুত ভাসানচরে নিতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় এনজিওর বিরুদ্ধে । এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন ইস্যুতে এনজিওদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের নিরুৎসাহিত করার প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তর আলোচনা হলেও আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। যদিও তাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হয়। ওই গ্রুপ গত দুই বছরে চার দফা বৈঠক করে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে মিয়ানমারের নেপিডোতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারের অনুরোধে সে বৈঠক দুইমাস পিছিয়ে মে মাসে সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সে বৈঠকও বাতিল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা কার্যত থেমেই আছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার জাতিগত নিধন আর নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে তিন বছর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল। তার আগে থেকে আরও তিন লাখ আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে সব মিলিয়ে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের দুটি উপজেলায় গঠিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে দিন দিন নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য যে, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত রোহিঙ্গা রা নিয়মিত রেশন পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদি আন্তর্জাতিক দেশীয় এনজিও কর্তৃক পেয়ে থাকলেও তাতে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু তার পরেও তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করার নিমিত্তে ব্যবসা বানিজ্য সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে বা চাকুরী তে যোগ দিয়ে নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

সকল ধরনের ব্যবসা বানিজ্যে তারা পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়েছে। কাঁচা সবজি, কাপড়ের দোকান,ক্রোকারিজ দোকান,মনোহারি দোকান,কম্পিউটার দোকান সহ অন্যান্য দোকানপাট দিয়ে তারা ব্যবসা করে বাঙ্গালীদের মত আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বিতা অর্জন করার সুযোগ গ্রহন করছে।
মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে তারা বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় বাঙালীদের জায়গা জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাসের পায়তারা অব্যাহত রেখেছে। অনেক রোহিঙ্গা ব্যক্তির নিকট বাংলাদেশের NID কার্ড অবৈধভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে বলেও জানা যায়।

রোহিঙ্গা হিসাবে তাদের উপর কোন প্রশাসনিক কঠোর নজরদারী নেই। ফলে তারা নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে অবাধে চলাচল করছে। এর ফলে অপরাধ প্রবনতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে টেকনাফ বন্দর থেকে শুরু করে সড়ক সংস্কার কাজ,এনজিওর উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড সহ অন্যান্য জনসাধারণের বিভিন্ন প্রতিষ্টানে দৈনিক মজুরের কাজ করে থাকে। এর ফলে স্থানীয় সাধারণ জনতা কর্মহীন বেকার হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র টেকনাফ স্থল বন্দরেই ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক কাজ করে বলে জানা যায়। বন্দর ছাড়াও টেকনাফ,উখিয়া, হোয়াইকং, হ্নীলা,বালুখালী কুতুপালং সহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গারা কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করছে। এসব কর্মকান্ড প্রতিরোধ না করা গেলে একদিন রোহিঙ্গারা ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াবে বলে মনে করেন স্থানিয়রা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design By Rana