শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
গত শীত মৌসুমের পর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের দেখা আর তেমন মেলেনি। এর মাঝে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলে ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে বাজারে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিল মাছের রাজা ইলিশ।
তবে কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার ফিশারিঘাটে ফেরা ট্রলারগুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আহরিত ইলিশের সিংহভাগই বড় ও মাঝারি সাইজের। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।
চলতি মাসের শুরু থেকে সাগরে ইলিশ শিকারে ট্রলার পাঠালেও মালিক ও জেলেদের মনে চরম হতাশা কাজ করছিল। এর মাঝে সাগর থেকে তীরে ফেরা বেশ কয়েকটি ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়ে। এতে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত তিনদিন ধরে তীরে ফেরা ট্রলার থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ মেলায় সব আতঙ্ক আর পেরেশানি উড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন।
বুধবার সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। টানা কয়েকমাস পর জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। সাগর থেকে শত শত ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে একের পর এক ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় বা ঝুড়িতে করে মোকামে তোলা হচ্ছে নানা সাইজের ইলিশ। এক পোটলা মাছ উঠে এলেই ব্যবসায়ীদের তোড়জোড় শুরু হচ্ছে। ফলে সরগরম হয়ে উঠছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
কেউ বরফ ভাঙছে, কেউ ইলিশ গুছিয়ে বরফজাত করে রফতানির জন্য তৈরি করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে অনেক আড়তদার ইলিশবোঝাই ট্রাক সারি করে রেখেছেন। রাতে তা রওনা হবে।
মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারি বলেন, অনেক দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এ সেক্টরের সঙ্গে থাকা মানুষগুলোর কষ্টে দিন গেছে। তার উপর করোনার দুর্যোগ চলছে। এখন আল্লাহর রহমতে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্টদের কষ্ট দূর হবে বলে আশা করছি।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতুর মতে, নিষেধাজ্ঞাকালে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা ধার দেনায় চলেছে। মাছ বেশি পাওয়া অব্যাহত থাকলে দেনা শোধ করে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে ব্যবসায়ী ও ফিশিং ট্রলার মালিকরা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. এহসানুল হক বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন পর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। ফিরে আসা ট্রলারগুলো কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছে। এতে মাছের পরিমাণ ও রাজস্ব উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, গত বছর জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। এ কারণে ইলিশের প্রজনন ও আকৃতি বেড়েছে অনেকগুণ। দুর্যোগকাল কাটিয়ে জেলেরা সাগরে নামছেন। আশা করছি এবারও ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
Leave a Reply